শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
মো আসাদুজ্জামান, ঠাকুরগাঁও।।
উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে নভেম্বরের শুরুতে পরে শীত। তবে দিনের বেলায় তেমন ঠান্ডা না থাকলেও রাতে বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে থাকে শীতের প্রকোপ। তাই এই শীতে ব্যস্থ হয়ে পড়েছে নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর গ্রামের খেজুরের বাগানের গাছিরা।
ভোর ৪ টা থেকে খেজুরবাগানে রস খেতে আর গুড় তৈরি দেখতে ভিড় করছে হাজার হাজার দর্শনার্থী। মটরসাইকেল, অটোতে কেউ বা আবার মাইক্রোবাস নিয়ে ভোর ৫টা থেকে অপেক্ষা করছে খেজুর গুড় বানানো দেখার জন্য।
সারারাত খেজুর গাছের আগায় লাগানো হাঁড়িতে ফোঁটা ফোঁটা করে জমা হচ্ছে রস। ভোরবেলায় গাছে উঠছেন চাষিরা। রসভর্তি মাটির হাঁড়ি নামিয়ে টিনের পাত্রে জ্বাল দিয়ে তৈরি করছেন গুড়। খেজুর রসের গুড় তৈরির এমন মনমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ না ভিড় করছে আশেপাশের অনেক জেলা থেকে আসা মানুষ।
রংপুর থেকে খেজুরের গুড় তৈরি দেখতে আসছেন আবু বক্কর সিদ্দিক তিনি বলেন, আমি ভোর ৪ টায় আসছি খেজুরের বাগানের খেজুর রস আর গুড় তৈরি দেখতে। বেশ ভাল লাগলো প্রাকৃতিক ভাবে কোন ভেজাল ছাড়া এখানে খেজুরের গুড় তৈরি হচ্ছে। বাসার জন্য ৩ কেজি খেজুরের গুড় নিলাম।
আমির আহমেদ নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, আমরা শহরের গোয়ালপাড়া থেকে বেশ কয়েকজন মটরসাইকেলে নারগুন খেজুরের বাগানে আসছি। এসে রস খেলাম। প্রতি লিটার রস ৫০ টাকা করে নিছে। চোখের সামনে খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি হচ্ছে দেখে অনেক ভাল লাগছে।
রাজু ইসলাম নামে আরে দর্শনার্থী বলেন, ভোরে ৪ টার পর আসলে খেজুরের রস পাওয়া যায় না। তাই বড় ভাইসহ চলে আসছি রস খেতে। সরাসরি গাছ থেকে রস নামিয়ে গুড় তৈরির প্রক্রিয়াটি দেখলাম। রস কিনে খেলাম। সত্যি মনোরম পরিবেশ মুগ্ধকর। তবে গুড়ের দামটা একটু বেশি। ১ কেজি গুড় ৩শ টাকা করে। দামটা একটু কম হলে ভাল হয়।
খেজুর বাগানে কাজ করে নাটোর লালপুর থেকে আসা ৬ জন গাছি। তারা প্রতিদিন গাছগুলোতে হাঁড়ি তোলেন ও নামান।
আব্দুল গফুর নামে একজন গাছি বলেন, প্রতিবার আমার ঠাকুরগাঁওয়ের এই খেজুরের বাগানে আসে কাজ করি। আমাদের মজুরি মাসে ৩০ হাজার টাকা। প্রতিদিন জন প্রতি ৫০/৫৫ টাকা গাছে হাড়ি লাগাই আমরা। এবং ভোরে তা সংগ্রহ করি।
মজিদ নামে আরেক গাছি বলেন, এখন শীত কম হওয়ায় প্রতিদিন ৩০/৪০ লিটার রস ও ৪০/৫০ লিটার গুড় উৎপাদন করছি। তবে শীত যত বাড়বে রসের ও গুড়ের সংখ্যাও বাড়বে। ভোর থেকে এই জেলা ও জেলার বাইরে থেকে প্রচুর মানুষজন আসে রস ও গুড় কিনে। আমরা রস ও গুড়ের মধ্যে কোন ভেজাল মেশাই না। প্রায় ১৫ দিন ধরে গাছে হাড়ি বাধা শুরু করেছি। তবে এখন শীত কম হওয়ায় তেমন রস পাচ্ছি না। শীত বাড়ার সাথে সাথে রস বৃদ্ধি হবে।
খেজুর বাগানের মালিক মনিরুজ্জামান বলেন, ২ বছরের চুক্তিতে আমি সুগার মিলের কাছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা দিয়ে ৭শ গাছ লিজ নিয়েছি। গতবার আমার মোটামুটি আসল উঠে গেছে। এইবার যা আসবে সব লাভ। তবে আশা করছি ২/৩ লক্ষ টাকা লাভ করতে পারব। তবে এখন শীত কম হওয়ায় তেমন রস ও গুড় তৈরি করতে পারছি না তবে শীত পড়লে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার লিটার রস সংগ্রহ করা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ- পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, শীত শুরুতে নারগুন ইউনিয়নে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহ। ঠাকুরগাঁও মাটি খেজুর বাগান করা জন্য উপযোগী। এই জেলার মানুষ আম, কাঠাল ও লিচু বাগান করতে বেশি আগ্রহী। আমরা চেষ্টা করবো যেসব অনাবাদি জমি আছে সেগুলোতে কৃষকরা যাকে খেজুরের বাগান করে সাবলম্বী হতে পারে।